Tuesday, October 12, 2021

ভূগোলেতে গোলমাল!

রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে মাঝেমধ্যে যে বিশেষ এক ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় প্রায় প্রত্যেককে, সেটা হ'ল, "দাদা, এই জায়গাটা কোথায় একটু বলে দেবেন?" আমাকেও হয়েছে, হচ্ছে এবং অবশ্যই ভবিষ্যতেও হবে। মুশকিলটা হ'ল, অন্যদের তুলনায় ব্যবহারিক ভৌগলিক জ্ঞানটা আমার ঈর্ষণীয়ভাবে কম থাকার কারণে এরকম প্রশ্ন আমাকে কমবেশি প্রতিবারই বেশ বিপাকে ফেলে। কিন্তু কি গেরো, বাইরে বেরোলেই যে যেখানে আছে, সবাই যেন কিরকম ঠিকানা জানবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে আমার দিকে তাকিয়ে। "দাদা, অমুক বাড়িটা কোথায়? তমুক দোকানটা কোনদিকে? এখানে কি কোনো সুলভ আছে? ডাক্তার ঘটকের চেম্বারটা কি এদিকে? 'গাধা পিটিয়ে ঘোড়া' করার স্যার কি পাশের গলিতে টিউশন দিচ্ছেন এখন থেকে, ইত্যাদি, ইত্যাদি" প্রশ্নগুলো যে কি ভীষন ব্যতিব্যস্ত করে তোলে যে কি বলব! ওই যে প্রবাদ আছে শুনেছিলাম, মানুষের মুখ হচ্ছে খোলা বই, তা আমার ধারনা যে আমার মুখটা খোলা না হলেও বন্ধ অক্সফোর্ড অ্যাটল্যাসের প্রচ্ছদের মতো পাক্কা দেখতে লাগে। তাই না হলে লোকজন খামোখা আমাকেই বা কেন চলমান দিকনির্ণায়ক যন্ত্র ঠাওরাবে। নিজের পাড়ায়, বড় রাস্তায়, অন্যের পাড়ায়, যেখানেই যাই না কেন, ঠিকানা জানতে কেউ না কেউ ঠিক অপেক্ষায় থাকে। আমাকে পেলেই, "দাদা....." বলে এগিয়ে আসবে আর তারপর শুরু হবে "আবার খাবো দোকানটা কোথায় বলতে পারেন?" জাতীয় প্রশ্ন। আমার কাছে যা দাদাগিরির গুগলি পর্বের মতো! আমি তো স্বপ্ন দেখি যে আমি মঙ্গলগ্রহে যাচ্ছি আর মহাকাশে মাঝপথে আমার বিমানের জানলায় কোনো অন্য গ্রহের ভ্রাম্যমান জীব টোকা দিয়ে আমাকে ক্র্যাব নেবুলা যাওয়ার পথটা দেখিয়ে দিতে বলছে।

সমস্যাটা হচ্ছে, আমার মুখই হোক কি চোখ, কান, কপাল, ভুরু (মাস্ক পরলেও যেহেতু লোকে আমাকেই ধরে ঠিকানা বুঝিয়ে দিতে বলে) হোক, যেটাই দেখে লোকে ভাবে যে আমার মধ্যে নিশ্চয় কোনো ভাস্কো-ডা-গামা লুকিয়ে আছে, তাদের জন্য আরেকটা প্রবাদই যথেষ্ট, 'ডোন্ট জাজ্ আ বুক বাই ইটস কভার', তাই আমার মুখ দেখে আমাকে চলমান অ্যাটলাস ভাবলেও, পাতা ওলটালেই ভূগোলেতে গোল ধরা পড়বে! কিন্তু পাতা উল্টে পরখ করা তো দূরস্থান, বইমেলা গেলেও দেখেছি লোকে কোনো অজ্ঞাত কারণে ধরে নেয় আমি এযুগের কলম্বাস আর আমাকে কোন স্টল কোথায় জানতে চায়।

তবে ব্যাপারটা কিন্ত বরাবর এরকম ছিল না। প্রাইমারিতে একবার ভূগোলে ৫০এ ৪৮ পেয়েছিলাম। ব্যাস, তারপর কি যে হল কে জানে! মাধ্যমিকে ওই ৪৮টা টেনেটুনে ৬৮ অবধি গেছিল, কিন্তু নিচের ৫০ ততদিনে তো ১০০ হয়ে গেছে। ঠিক যেন ম্যাগনেটিক হিল, মনে হবে উঠছি, কিন্তু আসলে পড়ছি। তাই যদিও আমার ভূগোলের জ্ঞানটা প্রাইমারিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা পেরিয়ে মাউণ্ট এভারেস্টের দিকে এগোচ্ছিল, কিন্তু রাস্তায় বোধহয় গঙ্গোত্রী হিমবাহে পিছলে গিয়ে সটান কাশ্মীরের মতো উপত্যকা অঞ্চলে ফাইনালী ল্যান্ড করল! দেখলেন তো কিরকম কাঞ্চনজঙ্ঘা, এভারেস্ট, গঙ্গোত্রী, কাশ্মীরকে এক জায়গায় নিয়ে এলাম! তবেই বুঝুন ভূগোলের জ্ঞানটা ঠিক কতটা হলে এরকম তুলনা করতে পারি।

একবার আমাকে সেলিমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে কেউ ২৪০ রুটের বাস কোথা থেকে ছাড়ে জিজ্ঞেস করেছিল। পাশে আমার এক স্কুলের বন্ধু ছিল, আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম উত্তরটা, ব্যাস পরদিন আমার বন্ধুমহলে ঘটনাটা রটে যায় যে আমি ২৪০ বাসস্ট্যান্ড চিনি না। ঘটনাটা যে সময়ের, তখন বাসটার টার্মিনাস ছিল সেলিমপুর থেকে দুস্টপেজ দক্ষিন পশ্চিমে আর দক্ষিন কলকাতায় থাকলে সেটা না জানাটা আর পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কি সেটা না জানা প্রায় সমার্থক!

কিন্তু কি করব, ছোটো থেকে বাবা মা একটা অদৃশ্য লক্ষণরেখা টেনে দিয়েছিল আমার জন্য যেটার ব্যাস কয়েকশো মিটার। তার বাইরে বেরোলে কি হবে বলেনি তবে বেরোতে গেলেই মায়ের চোখ আর বাবার মুখ আর তাদের আদেশ অমান্য করলে সেই চোখমুখের ভৌগোলিক পরিবর্তন কি হতে পারে কল্পনা করলেই আমি আবার ব্যাক টু অরবিট হয়ে যেতাম। তাই স্কুলবেলায় বন্ধুবান্ধব যতই এদিক ওদিক ঘুরে নিজেদের প্র্যাক্টিকাল নলেজ বাড়াক, আমি তখনও থিওরি নিয়েই পড়ে আছি আর উল্টোডাঙার কোন জায়গাটা উল্টে থাকতে পারে জাতীয় বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি। না হলে কি বন্ধুরা যখন লায়ন্স সাফারি পার্কে ভোরবেলা বেড়াতে যাবে বলে তখন অত্যন্ত গম্ভীরমুখে মন্তব্য করি, "ওখানে কি এখন লায়ন থাকে?" এই কেলেংকারিটা ছিল আমার ২৪০ বাসস্ট্যান্ডের অবস্থান নির্ণয় করো সমস্যাটার থেকেও সরেস কিন্তু এটা যে কি করে ধামাচাপা দিতে পেরেছিলাম সে কেবল আমিই জানি।

তো যাই হোক, স্কুল পাশ করে কলেজে ঢুকে পাখাটা যেই গজাতে শুরু করল, আমি ভাবলাম যে ব্যস এবার না হয় বন্ধুদের সাথে কলকাতা চষে বেড়াব আর সেই ময়কায় আমিও রাস্তাঘাট চিনে নেব। কিন্তু চিনব কি করে? বন্ধুবান্ধব তো ততদিনে সিনেমা হল, খাবার দোকান, বইয়ের দোকান - কোথায় কি আছে জেনে বসে আছে। যেখানেই যাই না কেন আমার অবস্থা হতো আকাশের পাখির ঝাঁকের শেষের দিকের পাখিদের মতো। সামনের পাখিকে ফলো করলেই হলো, ভাবনাচিন্তার দরকার নেই। তাই কলেজে থাকাকালীন উড়লাম ঠিকই, তবে রাস্তাঘাট চেনাটা অল্পই হলো।

আমার স্কুল ছিল আমাদের বাড়ি থেকে চারটে মতো স্টপেজ উত্তরে আর কলেজ চারটে স্টপেজ দক্ষিনে, তাই সেখানেও নতুন রাস্তা বের করার বিশেষ উপায় ছিল না বললেই হয়। ছোটবেলায় নতুন কোথাও গেলে বাবা রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে যেত, কিশোর বয়সে বন্ধুরা। তাই ভৌগলিকভাবে স্বাবলম্বী হবার একমাত্র উপায় ছিল বিয়ের পর। কিন্তু তাও হল না। ঘটনা হচ্ছে, আমাদের বিয়েটা হয়েছিল আন্তঃজেলা বিবাহ। মানে আমি এক জেলার, আমার স্ত্রী অন্য জেলার। এবার হল কি, আমার গিন্নি যেহেতু পড়াশোনাটা খানিকটা কলকাতায় করেছে এবং তখন নিজের বাড়ি থেকে কলকাতায় বছরভর যাতায়াত করতো, তাই নিজের জেলা সমেত আমার শহরটাকেও আমার থেকে কম বয়সেই চষে ফেলেছিল। তাই জীবনে মাত্র একবার আমার ওকে আমার দিকের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িগুলো চেনানোর সুযোগ হয়েছিল আর ও আমাকে ওর জেলাটা তো বটেই মায় আমার শহরটাও আরেকবার করে চিনিয়ে দিয়েছিল। তারপর থেকে আমার চেনাজানা কেউ বাড়ী শিফ্ট করলে আমার একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে, আমার স্ত্রীকে ঠিকানাটা জানানো এবং তারপর ওকে ধ্রুবতারা মনে করে সমুদ্রে দিকভ্রান্ত নাবিকের মতো ফলো করা। এই করে আমার ভূগোলে গোল তো রয়ে গেলই, উপরন্তু চান্সই পেল না গোল কমার।

কিন্তু সেটা কে বোঝাবে পথিকবরদের। তাদের প্রশ্নের তো কোনো বিরাম নেই। আর তার সাথে যুক্ত হয়েছে আমাদের গলিটা যেটাকে গলি না বলে গলির গোলমাল বলা উচিত। একটা গলি যে এতগুলো শাখাপ্রশাখা বিস্তার করতে পারে সেটা এখানে না এলে বিশ্বাস করা কঠিন। এ যেন গলিদের সমাজে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য তৈরি হয়েছিল। শুরুটা বড়রাস্তা থেকে স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে, কিন্তু তারপর কয়েক মিটার অন্তরই ডান আর বামদিকে জন্ম দিয়েছে আরো কিছু গলির যেগুলো আবার অনুপ্রাণিত হয়ে প্রসব করেছে তস্য গলিদের - মানে ব্যাপারটা যা দাঁড়িয়েছে তাতে এর শাখার ব্যাপ্তি দেখলে যেকোনো মাঝারি সাইজের নদী লজ্জা পেয়ে যাবে। আর নদীও যেমন সমুদ্রে গিয়ে মেশে, এই গলিটাও গিয়ে মিশেছে রেললাইনে। তাই লোকজন এখানে ঢুকে যেমন বাড়ি, দোকান এসবের খোঁজ করে তেমনি ক্যানিং লোকালের টাইম এবং কোন প্ল্যাটফর্মে পড়বে জিজ্ঞেস করলেও সেটাকে আউট অফ সিলেবাস বলা যাবে না কোনোমতেই। উপরন্তু যোগ হয়েছে কলকাতা শহরের বাড়ির ঠিকানা বসানোর অদ্ভুত নিয়ম। কেন কে জানে, কিন্তু এই শহরটাতে প্রবেশ ইস্তক ল্যাটিটিউড ও লঙ্গিটিউড নিজেদের মধ্যে এমন জট পাকিয়ে ফেলেছে যে ১৯ নং বাড়ির পরেরটা ২০ হবে না ৪২০ হবে সেটা নিয়ে বাজী ধরলে ৪২০র জেতার সম্ভাবনা প্রবল। আমাদের পাড়াতেও এর অন্যথা নেই আর তাই লোকজন ঠিকানা না জিজ্ঞেস করে বাড়ির দ্রষ্টব্য ব্যক্তি বা ঘটনার উল্লেখ করে। তাই অমুকের বাড়ি বা তমুকের দোকান যেমন জানতে চাওয়া হয় তেমনি বাঁদরে কামড়ানো বা গরুতে গুঁতোনো ছেলেটার বাড়ি জানতে চাইলে দিক নির্দেশ করাটা সুবিধের হয়। তবে এসব ব্যাপার জানাটাও তো চাট্টিখানি কথা নয়, তাই এখন যদি অচেনা কেউ আমার কাছে অজানা ঠিকানা জানতে চায়, স্রেফ বলে দিই আমি এ পাড়ায় থাকি না, কাকুর বাড়ি বেড়াতে এসেছি।

লেখাটা শুরু করতে গিয়ে মনে আশঙ্কা ছিল শেষটা কি করে করব। কিন্তু সেখানেও পরিত্রাতা হয়ে দেখা দিল এক অজানা পথিক আর ওনার এক অসামান্য জিজ্ঞাসা। ব্যাপারটা হল কি এক সকালে আমি ঢাকুরিয়া ফ্লাইওভারের সামনে আমার এক কলিগের গাড়িতে লিফ্ট নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। আমার সামনে ফ্লাইওভার দিয়ে এসে একটা বাস থামল। সেটার থেকে বেরিয়ে এলেন এক ভদ্রলোক। আর নেমেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, "দাদা, এখানে মধুসূদন মার্কেটটা কোথায় বলতে পারেন?" প্রশ্নটা বুঝতে যা কয়েক মুহূর্ত লেগেছিল। এ যেন মুখস্থ করা প্রশ্নের কানের পাশ দিয়ে আসা আরেকটা প্রশ্ন। আমার সামনে তখন দুটো উত্তরের হাতছানি। প্রথমটা হল, দাদা এখানে এরকম কোনো মার্কেট নেই। কিন্তু দ্বিতীয়টা যে আরো লোভনীয়। রাস্তার উল্টোদিকে দেখতে পাচ্ছি দক্ষিণাপণ মার্কেট আর মধুসূদন মঞ্চ একটা গলির তফাতে পাশাপাশি বিরাজ করছে। তাই যেন পরীক্ষার লাস্ট বেল পড়ার পর কাম্পুচিয়ার রাজধানী নামের সাদৃশ্য অনুযায়ী কাম্বোডিয়া হলেও হতেও পারে মনোভাব নিয়ে দক্ষিণাপণ আর মধুসূদন মঞ্চের মাঝের গলিটার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললাম, "দাদা, ওদিকে আপনি দুটোই আংশিক পাবেন, এবার আপনি বেছে নিন আপনার মতো করে।" ভদ্রলোকের হতভম্ব মুখের আবহাওয়ার পূর্বাভাসটা বেশ উপভোগ করছিলাম। তবে কলিগের গাড়ি এসে যাওয়াতে কোনোপ্রকার দুর্যোগ ঘনাবার আগেই আমি পগার পার!

Sunday, September 05, 2021

সিরিয়াল কিলার

ভ্যাবলার খুব শখ হয়েছে যে বড় হয়ে টিভিতে সিরিয়াল পরিচালনা করবে। বিষয়টা নিয়ে অবশ্য খুব বেশি ভাবনাচিন্তা করেনি। তবে তার সদ্য মাধ্যমিক দিয়ে পাশ করা বুদ্ধি অনুযায়ী কাজটা সমস্যার বলে মনে হয়নি। তো তাই নিয়েই সেদিন ঝানুজ্যেঠুর সাথে আলোচনা করছিল। পাড়ার চায়ের ঠেকে ছুটির দিনে সকাল থেকেই লোক জমতে শুরু করেছে। ভ্যাবলাও ছিল, জ্যেঠুও প্রাতঃভ্রমণ থেকে ফেরার পথে দোকানে ঢুকেছিলেন জিরোতে। পাড়াতে জ্যেঠুর একটা ফোটো তোলার দোকান আছে। অবশ্য উনি ছেলেদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন কারন ডিজিটাল যুগে খদ্দেররা বড্ড অধৈর্য, তাদের সামলাতে গেলে ডিজিটাল যুগের ছেলেরাই ঠিক। তবে সে ব্যাবসা যেই চালাক না কেন, ফটোগ্রাফি নিয়ে মতামত জানতে লোকজন এখনও ওনাকেই স্মরণ করে। তাই তাঁকে দোকানে পেয়ে ভ্যাবলা আর কালবিলম্ব না করে পাকড়াও করল।
ভ্যাবলা শুরু করল, "বুঝলে জ্যেঠু, ভাবছি পড়াশোনাটা শেষ করেই সিরিয়াল বানাতে শুরু করব।"
"চাষ করবি?" জ্যেঠু ভেবেছেন ভ্যাবলা cereal বলেছে!
"আহ জ্যেঠু! কি যে বলো! চাষের কথা আসছে কোথা থেকে?"
ঝানুজ্যেঠু অবাক, "কিন্তু তুই যে বললি cereal বানাতে শুরু করবি।"
"উফ জ্যেঠু! তোমাকে নিয়ে আর পারিনা সত্যি! বলছি সিরিয়াল করব গো, টিভি সিরিয়াল", ভ্যাবলা বিরক্ত মুখে বলে।
"কি? সিরিয়াল করবি? তো বানাতে শুরু করব বলছিস কেন? এ কি আমাদের পচার চা নাকি যে জল গরম করলাম আর বানিয়ে ফেললাম?" এবার জ্যেঠুকে বেশ বিরক্ত লাগে।
এবার দোকানের মালিক নিজের নাম আর সিরিয়াল একসাথে শুনে চায়ের ডেকচি হাতে বেরিয়ে এসে বলে, "কি বললে জ্যেঠু, সিরিয়াল বানাবে? আমাকেও নেবে? কি চরিত্র দেবে? নায়কের?"
"আমি বানালে তোকে চায়ের পাতার চরিত্রটা দিতাম", জ্যেঠু গম্ভীর মুখে মন্তব্য করেন, "তবে আপাতত কেউ বানাচ্ছে না, ভ্যাবলা সিরিয়াল বানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছে।"
"ঠিক", গর্বিত মুখে সায় জানায় ভ্যাবলা, "সিরিয়াল বানানোটা পুরোপুরি আমার ইচ্ছে পচাদা, তাই জ্যেঠুর থেকে একটু বুদ্ধি নিচ্ছিলাম।"
চোখটা গোলগোল করে ভ্যাবলাকে জরিপ করতে করতে পচা অবাক হয়ে জানতে চায়, "তুমি করবে? তুমি তো সবে মাধ্যমিক দিলে!"
"তো কি হল? আমি কি বলেছি এক্ষুনি সিরিয়াল বানাবো!" ভ্যাবলা তেড়ে যায়, "আপাতত ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি, সামনের দুটো বছর যেতে দাও, তারপরই নামাব!"
"আবার সেই নামাব!" জ্যেঠু এবার হতাশ হয়ে ভ্যাবলাকে জিজ্ঞেস করেন, "বলি এ কি তোর বাড়ির চাল ফোটানো পেলি যে তখন থেকে নামাবো, বানাবো করছিস! সিরিয়াল বানানো কি এতই সোজা?"
"আবার কি?" জল গড়ানো অব্দি রান্নার বিদ্যা নিয়ে ভ্যাবলা বলে, "তবে চাল ফোটানোর মতো অমন সোজা কাজ না হলেও খুব কঠিন কিন্তু নয় ব্যাপারটা।"
"কঠিন নয়? তাহলে বরং তুই সিরিয়াল বানানোর কথা না ভেবে চলচ্চিত্র করার কথা ভাব", জ্যেঠুর ব্যাঙ্গোক্তি।
ভ্যাবলা অবশ্য সেটা ধরতে না পেরে গম্ভীর হয়ে বলে, "সে আমি ভেবে দেখেছি আগেই, সিরিয়াল বানালে লোকে চিনবে বেশি।"
"কি করে?" ভ্যাবলাকে ব্যাঙ্গোক্তিটা এরকম গুরুত্ব সহকারে নিতে দেখে ঝানুজ্যেঠু অবাক।
"সহজ হিসেব," ভ্যাবলার চটজলদি উত্তর, "কোনো চলচ্চিত্র রিলিজ হওয়ার পর কতদিন হলে চলে?"
"কতদিন?" পচার জিজ্ঞাসা।
"খুব নাম করলেও, চলে মাসখানেকের বেশি নয়, তারপর কম লোকই যায় দেখতে।"
"সে ঠিক, সেবার গুরুর ছবি এলো, হেব্বি ঝাড়পিটের, দ্বিতীয় সপ্তাহে রাতে গেলাম দেখতে, শুনলাম ম্যাটিনি করে দিয়েছে, তো পরের হপ্তায় ঠিক সময় গেলাম, শুনলাম চলে গেছে," পচা অভিমানে চায়ের জলের মতো ফুটতে থাকে, "কেবলদাদাকে বলেছি, ছবিটা যদি শোনে টিভিতে দেবে যেন জানায়, দোকান বন্ধ করে রাখব দুপুর থেকে।"
"তবেই দেখ, ছায়াছবি ব্যাপারটা এরকমই, তুমি দেখতে চাইছো, কিন্তু সময় ম্যাচ করছে না," উৎসাহ পেয়ে ভ্যাবলা বলতে থাকে, "এদিকে সিরিয়ালের বেলায় দেখো, তিনশো পয়ঁষট্টি দিন একই সময়ে দেখিয়ে যাচ্ছে, সে তুমি দেখত চাও কি না চাও! সেই সুযোগে পরিচালকের নামটাও লোকে জানছে ওই তিনশো পয়ঁষট্টি দিন ধরে। ছায়াছবি হলে কি হত?"
"ঠিক, তুই বানালে তো কিছুতেই হত না!" জ্যেঠুর স্বগোতক্তি।
পচাও নিজের মত জানিয়ে দেয়, "না, হত না, তুমি সিরিয়ালই বানাও ভেবলুদা! দেখার জন্য আমরা তোমার পাশে আছি।"
"বাপরে বাপ! তোর সিরিয়াল বানানোর কথাতেই দর্শক রেডি, কি ডিমান্ড রে!" জ্যেঠুর গলাটা ফের কৌতুকের মতো শোনাল।
"তাহলে আর বলছি কি? সিরিয়াল এখন পুরো happening জিনিস জ্যেঠু," ভ্যাবলা বলে।
"তা তুই যে সেই তখন থেকে বানাবি, নামাবি করছিস, সিরিয়াল করার জানিসটা কি তুই?" জ্যেঠুর জিজ্ঞাসা।
"জানার তো বেশি কিছু বুঝতে পারলাম না এত সিরিয়াল দেখে। অভিনেতারা অভিনয় করে যাবে, আমরা তার অভিনয় রেকর্ড করব, হয়ে গেল।" বিজ্ঞের মতো জানায় ভ্যাবলা।
জ্যেঠু তো শুনে চমকে ওঠেন, "অভিনেতারা অভিনয় করবে আর তুই রেকর্ড করবি, হয়ে গেল? তুই তো চলচ্চিত্রে বিপ্লব আনতে চলেছিস রে। দৃশ্যের এডিটিং নেই, background music নেই, চরিত্র আর site বাছাই করা নেই, সবার উপরে গল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা নেই, ভাষাটা বাঙলা করবি তো?" শেষ কথাটা ব্যাঙ্গের ছলে বলে ওঠেন জ্যেঠু।
"কি ভেবেছ কি তুমি জ্যেঠু, এসব নিয়ে কি কিছুই ভাবিনি?" এবার ভ্যাবলার পালা ঠাট্টা করার।
"ভেবেছিস?" জ্যেঠু এবার, সত্যি বলতে কি, আগের থেকেও বেশি চমকান।
"ভাবিনি আবার?" ভ্যাবলা বলে চলে, "বাঙলা সিরিয়াল করব, অভিনেতাদের যাচাই করে তবেই সুযোগ দেব, বাছাই পর্বে যারা প্রবল স্মৃতিশক্তি প্রদর্শন করে দেখাতে পারবে তারা অগ্রাধিকার পাবে, indoor site যদি বলো তো বড় একটা হলঘর হলেই চলবে, কয়েকটা আসবাব শুধু জায়গা হিসেব করে বসিয়ে দিলেই হবে, তবে গল্পের ব্যাপারটা ভাবিনি খুব বেশি কারণ এখন তো concept নিয়ে কারবার। concept হচ্ছে আমাদের কানের মতো, ওটা টানলেই গল্প আমাদের মাথা থেকে বেরিয়ে আসবে।"
"সাংঘাতিক তো," পচা নিজের কানটা ধরে একটু টেনে নেয়, "কান টানলে মাথা আসে শুনেছিলাম, গল্পও বেরোয়? তা, তোমার মাথা থেকে কি বেরোলো ভেবলুদা?"
"বুদ্ধিটা!" জ্যেঠুর মন্তব্য, "যতটুকু ছিল, পুরোটাই।"
"আওয়াজ দিচ্ছো তো?" ভ্যাবলা এবার জ্যেঠুর ব্যঙ্গটা ধরতে পারে, তাহলে তোমাকে বলি শোনো, আজকালকার সিরিয়ালে যা concept use করছে সেটা বেতাল পঞ্চবিংশতি পড়া থাকলেই হয়ে যাবে। আমিও সেরকমই কিছু করব ঠিক করেছি।"
পচা তো কৌতুহলি হয়েই উঠেছিল, এবার উত্তেজিত হয়ে পড়ল, " কি বললে ভেবলুদা, তুমি অরণ্যদেব আর পঞ্চতন্ত্রের গল্প পাঞ্চ করবে সিরিয়ালে?"
"পচারে", জ্যেঠু ভেবলার concept সম্বন্ধে বক্তব্যে খানিকটা চমকে ওঠার আগে পচার মন্ত্যব্যে ক্ষেপে উঠলেন, "আমি তোর নাকের উপরেই এবার পাঞ্চ ঝাড়ব যদি আবার বাজে কথা বলিস। ভ্যাবলা ওটা বিক্রম বেতালের গল্প বলছে, অরণ্যদেব আর পঞ্চতন্ত্র নয়।"
"অ", পচা বেজার মুখে বলে, "তা ওরকম বেতাল পঞ্চব্যঞ্জন বলছো কেন? ও তো বিক্রম বেতাল বললেই হয়!"
বইটার ওরকম গোত্র পরিবর্তন হতে দেখে পচাকে ফের বকুনি দিতে গিয়েও কি ভেবে থেমে জ্যেঠু ভ্যাবলার দিকে ফিরে বললেন, "কিন্তু এবার আমারও খানিকটা কৌতুহল হচ্ছে, আজকালকার সিরিয়াল এতটা গভীরে ঢুকে research করছে? তবে তো দেখতে হয় এবার মাঝেমধ্যে!"
"তবে আর বলছি কি," উৎসাহ পায় ভ্যাবলা।
"কিন্তু কি concept চলছে খুলে বল তাহলে," ঝানুজ্যেঠু এবার সত্যিসত্যি কৌতুহলী।
"ব্যাপারটা হচ্ছে কি", ভ্যাবলা এবার মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে গুছিয়ে শুরু করল, "সেই যে একটা গল্প ছিল না, এক রাজ্যের রাণী আর রাজকুমারী বনে ঢুকে হারিয়ে গেল আর অন্য এক রাজ্যের রাজা আর রাজকুমার তাদের দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে নিজেদের রাজ্যে নিয়ে উপস্থিত হলো।"
"মানে রাণীর রাজ্যে না রাজার রাজ্যে?" পচার প্রশ্ন।
"রাজার রাজ্যে!" ভ্যাবলার উত্তর।
"তাহলে রাণীর রাজা, মানে রাণীর স্বামীর কি হল?" পচা পুরো সিবিআই অফিসারের মতো প্রশ্ন করতে শুরু করেছে।
"থানায় নিরুদ্দেশের নোটিস দিতে গেল!" জ্যেঠু এবার গর্জে উঠলেন, "থামবি তুই? গল্পটা পুরো বলতে না দিয়ে শুধু প্রশ্নই করে চলেছে, যেন হাইকোর্টের উকিল।"
জ্যেঠুর গর্জনে পচা একটু মিইয়ে গেলেও মিনমিন করে বলল, "আমি তো ব্যাপারটা just কিলিয়ার করে নিচ্ছিলাম। বকছ কেন শুধুমুধু?"
"আর কিলিয়ার করে কাজ নেই!" ভেংচে ওঠেন জ্যেঠু, "চুপ করে শুনে যা, শেষ হওয়ার আগে আর কথা নয়।"
তারপর ভ্যাবলার দিকে ফিরে বলেন, "নে ভ্যাবলা, বাকিটা বল।"
"বলছি তো," ভ্যাবলা summarise করে আবার শুরু করে, "তো ব্যাপারটা হচ্ছে এক দেশের রাণী আর রাজকুমারী অন্য দেশের রাজ্যে থাকতে শুরু করল। এবার, in due course of time, রাজার রাজকুমারীকে পছন্দ হওয়াতে তাকে বিয়ে করে ফেলল আর রাণিমাও রাজকুমারকে বিয়ে করল।"
"হতেই পারে না, তোমার নিশ্চয়ই কোথাও গণ্ডগোল হয়েছে ভেবলুদা!" পচা আর থাকতে পারে না। জ্যেঠুর নির্দেশ ভেঙে শুধরে দিতে চায়, "ওটা নিশ্চয়ই রাজা-রাণী আর রাজকুমার-রাজকুমারীর বিয়ে বলতে চাইছো তুমি। বলো, ঠিক ধরেছি তো?"
"পচাদা, তুমি থামবে!" এবার ভ্যাবলাই বিরক্ত হয়, "যা বলেছি, ঠিক বলেছি! এটা থেকেই বেতালের প্রশ্নটা আসছে আর আসছে আমার concept!"
"তোকে না মানবাধিকারে ধরে!" জ্যেঠুর মৃদু মন্তব্য, তারপর অবশ্য জানতে চান, "তা প্রশ্নটা কি ছিল?"
প্রায় এ কান থেকে ও কান অব্দি চওড়া একটা হাসি হেসে ভ্যাবলা বলে, "বেতালের প্রশ্নটা ছিল অনেকটা এইরকম, রাজকুমারীর যে বাচ্ছাকাচ্ছা হবে তারা কি তাদের সৎদাদাকে দাদু বলবে?"
"কি বললে? দাদাকে দাদু বলবে! কেন?" পচার এবার পুরো গুলিয়ে যায়।
"কারন রাজকুমারীর বাচ্ছার বাবার দিক থেকে দেখলে সৎদাদা হচ্ছে রাজকুমার আর মায়ের দিক থেকে ধরলে সেই রাজকুমার-ই হচ্ছে তার দিদার স্বামী, অতএব দাদু। বুঝলে?" ভ্যাবলা মুচকি হাসে।
"কি ভয়ানক, তা বিক্রম উত্তর দিতে পারলেন?" পচা আবার চিন্তায় পড়ে গেল।
"বিক্রম কি করতে পারলেন সেটা প্রধান না, ঘটনা হচ্ছে, ভ্যাবলা যদি আজকে এরকম অবাস্তব আর অশালীন প্লট নিয়ে সিরিয়াল করে তবে কেলেঙ্কারি ঘটবে চারিদিকে।" জ্যেঠুর উপলব্ধি।
"আহ, জ্যেঠু!" অভয় দেওয়ার মতো করে ভ্যাবলা বলে, "আমি কি তাই বলেছি তোমাদের? আমি তো concept-টার কথা বলছি। এমন এক concept, যা ধরতে ধরতেই সময় কেটে যাবে, দর্শক বুঝতেই পারবে না। এটাই এখন hype গো!"
"ইয়ার্কি পেয়েছিস? এরকম অশোভন ব্যাপার দেখানো hype?" জ্যেঠু রেগে গেছেন।
"উফফ জ্যেঠু, আবার ভুল বুঝলে! আরে এরকম বলতে কি একরকম বলছি নাকি? সম্পর্কের খিচুড়িটা থাকবে তবে এরকম across the generation হবে না!" ভ্যাবলা বুঝিয়ে দেয়।
"তবে কি হবে শুনি?" জ্যেঠুর অস্থিরতা কাটছে না কিছুতেই।
"এখন যেটা চলছে সেটা অনেকটা এরকম," ভ্যাবলা খোলসা করে, "ধরো, হিরোর সাথে হিরোইনের বিয়ে হল....."
"এ তো তুমি last scene-এর কথা বলছ", পচা ফোড়ন কাটে।
"পচাদা," বিরক্ত মুখে ভ্যাবলা বলে, "তুমি না পুরো সেকেলে হয়ে গেছ। হিরো হিরোইনের বিয়ে আগেকার যুগে শেষে হত, এখন ওটা দিয়েই শুরু হয়। তুমি এখন শুধু চুপচাপ শোনো।"
পচা আবার মুষড়ে পড়ে, "আচ্ছা আচ্ছা, আর কিছু বলব না, বলে যাও।"
"Yes, চুপ করে শোনো। যা বলছিলাম," ভ্যাবলা continue করে, "হিরোর সাথে হিরোইনের বিয়ে হওয়ার কয়েকদিন পর আরেক হিরোইনের আবির্ভাব হয় যে নাকি হিরোর পুরনো স্ত্রী but তার কথা কেউ জানতো না। হিরোও না জানতে পারে কারণ মাঝে তার স্মৃতিভ্রংশ হয়ে গেছিল।"
"সেরেছে," পচার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে।
"আরে wait," ভ্যাবলা বলে, "সারার আর কি দেখলে। এই তো গেল দ্বিতীয় হিরোইনের কথা। এবার তারপর দেখা যায় যে সেই দ্বিতীয় হিরোইন এখন ফের বিবাহ করেছেন।"
"পচা, তোর হিসেবের খাতা যদি হাতের কাছে থাকে নিয়ে আসবি বাপ!" জ্যেঠুর আর্তিটা genuine শোনাল।
"আরো আছে, এদিকে দেখা যায় প্রথম হিরোইনের ছোটবেলায়, তাদের গ্রামের এক নিষ্ঠুর জমিদারের সাথে বালিকা বিবাহ গোছের ব্যাপার হয়েছিল যেটার পরে তারা পালিয়ে শহরে চলে আসে!" ভ্যাবলা বলে চলে, "এদিকে সেই জমিদারের আরেক পক্ষের স্ত্রী আবার দ্বিতীয় হিরোইনের প্রথম স্বামীর প্রথম পক্ষ।"
"বাপরে!" পচার শকে চলে যাওয়ার জোগাড় হয়, "এরকম চলতে থাকলে তো হিরো নিজেই না নিজেকে প্রশ্ন করে বসে, 'আমি কি আমার স্বামী?'"
"Exactly!" ভ্যাবলা আনন্দে লাফিয়ে ওঠে, "দর্শকদের থেকে এরকমই কিছু reaction দরকার। মানে জটিলতাটা এমনই হবে যে জট ফেলতে ছ-মাস আর খুলতে ছ-মাস। মানে পুরো একটা বছরের গল্প তৈরি।"
"খুলবে মনে করছিস?" জ্যেঠুর সরস প্রশ্ন, "যা জট বানালি, তা খুলতে খুলতে না তোর চুলদাড়ি পেকে যায়।"
"খুলবে, ঠিক খুলবে! না খুললে কয়েকটা চরিত্রকে মাঝপথে পটল তুলিয়া দেব, জট আপনিই খুলে যাবে," ভ্যাবলার উত্তর।
এরকম সমাধানের চোটে পচার ক্রমাগত বাড়তে থাকা হাঁ মুখটার দিকে তাকিয়ে জ্যেঠু বলেন, "তুই বরং তোর প্রতিটা episode শুরু করার আগে warning message দিয়ে রাখিস, 'দয়া করিয়া মুখে mask পরিয়া সিরিয়াল দেখিবেন', কারণ তোর সিরিয়াল যে concept অনুযায়ী চলবে, তাতে দর্শকরা ঘনঘন হাঁ করবে আর তখন corona তো ছোটোখাটো ব্যাপার, মুখের মধ্যে চড়ুই পাখি ঢুকে গেলেও আশ্চর্য হব না!"
"আবার মজা করছো তো?" ভ্যাবলা এবার রেগে গিয়ে বলল।
"মজার আর কি করলাম বল," পচার মুখের দিকে ইঙ্গিত করে জ্যেঠু বলেন, "তোর ভবিষ্যৎ দর্শকের অবস্থা দেখে বলছি।"
ভ্যাবলা তাকাতেই পচা মুখটা বন্ধ করে একটা ঢোক গেলে। অবশ্য জ্যেঠু এবার ভ্যাবলার ধারনা সম্বন্ধে যে বেশ উৎসাহী তা বোঝা গেল ওনার পরের প্রশ্নে, "তা ভ্যাবোল, তোর ওই হলঘর আর প্রখর স্মৃতিশক্তিধরদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণগুলোই কি এরকম কিছু কারণে?"
জ্যেঠুর মুখে তার আদরের নাম ভ্যাবোল শুনে দ্বিগুন উৎসাহে ভ্যাবলা বলে, "ওগুলো খরচ কমানোর জন্য দরকার যা বুঝেছি।"
"কিরকম শুনি?" জ্যেঠুর কৌতুহল প্রকাশ পেল আবার।
"ব্যাপারটা হচ্ছে, আজকাল সিরিয়ালে একটা প্রকাণ্ড হলঘর থাকে।" ভ্যাবলা বলে, "সেখানেই যত গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হয়। সেটাতে আসবাব থাকে তবে সেগুলো সিনিয়র অ্যাক্টরদের বসার জন্য। বাকিরা সবাই দেখি দাঁড়িয়ে থাকে। বসার জায়গা থাকলেও বসে না, ওটাই নিয়ম। আর ওই হলঘরটা পুরো strategic location হয় বাড়িটার। মানে তুমি বাইরে বেরোচ্ছ, হলঘর পার করতে হবে, একটা ঘর থেকে আরেকটা ঘরে যাচ্ছে, হলঘর পেরোতে হবে, একতলা থেকে দোতলা যাচ্ছ, হলঘর পেরিয়ে যেতে হবে।"
পচা ফোড়ন কাটে, "বাথরুম পেলে? তখনও হলঘর পেরিয়ে?"
"বোধহয়," ভ্যাবলার চটজলদি জবাব, "তবে অতটা details কখনও সিরিয়ালে দেখায় না। যাই হোক, একটা হলঘর এরকম বাড়ির মাঝে থাকার দরুন যে কোনো আলোচনা একবার যদি হলঘরে শুরু হয়, তখন আশপাশের যত ঘর আছে, সমস্ত জায়গা থেকে বাকি চরিত্ররা চট করে আলোচনায় সামিল হতে পারে। শাশুড়ি বউমার মধ্যে কথা চলছে হয়তো যে প্রেশার কুকারে কটা সিটি পড়েছে, ছটা না আটটা, শ্বশুর বেডরুম থেকে দৌড়ে এসে বলছেন চারটে, ছেলে বাথরুম থেকে বেরিয়ে বলছে দুটো বড়, একটা ছোটো সিটি শুনতে পেয়েছে, বাড়ির নাতি দোতলা থেকে নেমে বলছে দশটা শুনেছে, গেস্টরুমে যে অতিথি বছরের পর বছর পড়ে আছে তার বক্তব্য যে সে শোনেইনি সিটি পড়েছে, দেওর বাইরে বেরোচ্ছিল, বলে গেল সে সাতখানা অব্দি গুনতিতে পাচ্ছে। মানে আলোচনা শুরু হলো তো সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গোটা পরিবারের সবার। একমাত্র যে ঠিকটা জানে সে ছাড়া সবাই মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাবে। এটা করে পরিচালকের সুবিধে হল যে রান্নাঘর, হলঘর, বেডরুম, ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় যে বিভিন্ন প্রকৃতির আলোচনা হয় সবকিছু এক জায়গায় নিয়ে এসে site ভাড়াটা কম করা।"
"উফ তোমার কি বুদ্ধি গো!" পচা তারিফ করে ওঠে।
"সেই দেখছি", জ্যেঠু অবশ্য গম্ভীর, "তা তুই তবে এবার বোঝা অভিনেতার অভিনয় ছেড়ে স্মৃতিশক্তি পরখ করাটা কেন দরকার পড়ছে।"
"পড়বে না?" আবার ভ্যাবলা শুরু করে, "কারণ ওই হলঘর!"
"আবার হলঘর," পচা ভেবেছিল হলঘর পর্ব শেষ।
পচার কথাটা পাত্তা না দিয়ে ভ্যাবলা বলতে থাকে, "yes, এই হলঘরে তো বেশিরভাগই দাঁড়িয়ে আলোচনা করছে। এখন সবাইকে যাতে দেখা যায়, পরিচালক এদের semicircle-এ থাকতে বলে। তো এরা তো ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে, কিন্তু একেবারে পিছনের দিকে যে আছে, সে কি দেখছে ভেবে দেখেছো কি?"
"কি দেখছে?" পচা ভেবে কুলকিনারা পায় না।
"বাকিদের মাথার পিছনটা", ভ্যাবলা একটু দম নেয়।
"তো?" পচা বুঝতে পারেনা এতে ভ্যাবলার অসুবিধেটা কোথায়।
"তো, পিছনের অভিনেতাকে তো খেয়াল রাখতে হবে কে কোথায় আছে। বাবা, জ্যাঠা, কাকা তো সবাই বিভিন্ন সিরিয়ালে বিভিন্ন চরিত্রে। আজকাল তো চুলও কারুর পাকেটাকে না, পাকলেও সামনের দিকের চুলে মেকআপ, পিছন দিক থেকে তো same রঙ। তো স্মৃতিশক্তি প্রবল না হলে বাবার দিকে তাকিয়ে বলা dialogue দাদার পিছন লক্ষ্য করে বললেই তো হয়ে গেল, retake করে করে পয়সা খরচ।"
"তোমার কি বুদ্ধি গো!" পচা কথাটা repeat করে মাথা ব্যাপারটা ধরতে পেরে, "ঠিক বুঝেছো সমস্যাটা, পিছন থেকে তো বটেই, পুরুষ চরিত্র হলে তো মুখটা side থেকেও same লাগে। সবার এক style, দাড়ির মিহি আস্তরণ, বাড়েও না কমেও না, কে যে কেটে দেয়?"
"ওটাকে trim বলে পচাদা, trimmer বলে একটা যন্তর আছে, ওরকম করে বাড়িতেই কাটা যায়", ভ্যাবলা জানায়।
"Trimmer না হয় হলো, কিন্তু ভ্যাবোল, তুই খরচের ভয় retake করবি না, আরে একটু আধটু ভুল হলে তো editing আছে, নাকি সেটার দরকার নেই তোর সিরিয়ালে?" জিজ্ঞেস করেন জ্যেঠু।
"নেই মানে?" ভ্যাবলা লাফিয়ে উঠে বলে, "Powerpoint শিখলাম কি তবে এমনি এমনি?"
এই নতুন চমকের চোটে এবার জ্যেঠুর লাফানোর পালা, "কি বললি? Powerpoint দিয়ে editing? তুই কি পাগল হলি?"
"আরে চটছো কেন?" আশ্বস্ত করে বলে ভ্যাবলা, "আমি কি বলেছি Powerpoint দিয়ে editing করব? Editing করার তো লোক থাকবে। আমি concept-টা বোঝার জন্য ওটা শিখছি।"
"এখানেও concept!" জ্যেঠু এবার হতবাক, "তা Powerpoint তোকে কি concept দিলো?"
"ঝড়াং ঝড়াং করে slideshow-এর," গম্ভীর মুখে বলে ভ্যাবলা, "ধরো একটা সিনে হিরো বাড়িতে ডিনারের সময় ঢুকে বলে, "আজকে রাতে চিকেন পিজ্জা অর্ডার করেছি, কুড়ি মিনিটে আসছে!"
এদিকে হিরোর মা সেদিন মুড়িঘণ্ট রেঁধেছেন। তিনি তো শুনেই মুখ ফুলিয়ে বসলেন।
হিরোর ভাই আবার মুড়িঘণ্টের জায়গায় চিকেন পিজ্জার কথা শুনে পারলে নাচতে শুরু করত কিন্ত মায়ের ভয় পারে না।
হিরোর বোনের মনের অবস্থাটা হচ্ছে, "বাইরের খাবার বললি যখন তখন চিকেন পিজ্জা না বলে চিকেন বিরিয়ানি বলবি তো!"
বাড়ির সবথেকে ছোটো ছেলে মুড়িঘণ্ট থেকে মুক্তির আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে।
হিরোর নির্বিবাদী বাবা স্ত্রীয়ের ভয়েতে আর ছেলের প্রতি স্নেহে ভাবছেন পিজ্জাতে মুড়িঘণ্টের টপিং দিয়ে খেলে কেমন লাগতে পারে।
তো এতসব ইমোশন তো এক ফ্রেমে দেখানো যাবে না। তাই একেকজনের মুখের ক্লোজআপ উপর নীচ করে, চোখের উপর জুম করে, মুখের সমস্ত পেশির উপর বারবার ফোকাস করে, মুখের একপাশ থেকে অন্যপাশে আলতো করে প্যান করে দেখাতে হবে। সাথে পিছন থেকে আলোর দপ করে হঠাৎ জ্বলে ওঠা ও থেকে থেকে কড়াৎ কড়াৎ করে আওয়াজ। এগুলো দেখে মনে হয় না Powerpoint চলছে? বলো জ্যেঠু?"
"নিশ্চয়ই মনে হয় ভ্যাবোল," জ্যেঠু বলেন, "আরো অনেক কিছুই মনে হচ্ছিল তোর কথার ভাবে, এমনকি যখন তোর প্যান করার কথা শুনলাম, সেই শুনে তো আমার অন্য প্যানের কথা মনে পড়ছিল!"
পচা কিন্তু এসবের মধ্যেও পিজ্জা দোকানের টেকনিকাল দিকটা মনে করিয়ে দেয়, "কিন্তু ভেবলুদা, এতকিছু তো অনেক সময়ের ব্যাপার, তোমার পিজ্জা ডেলিভারি বয় তো চলে আসবে।"
"আসুক," এবার গর্জে ওঠে ভ্যাবলা, "এসে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে ঘুমিয়ে পড়ুক, আমি এরকম শট আঠেরো মিনিটের একটা এপিসোডে ছাড়বো না। পুরো এক সপ্তাহ ধরে দেখাবো। সবার ইমোশন কি ফ্যালনা নাকি!"
"ঠিক," জ্যেঠুও ইমোশনাল হয়ে পড়েন মনে হয়, "তা সবই তো করে ফেললি, background score-টা বাদ রাখলি কি জন্যে? ওটা নিয়ে কিছু বল!"
"বলিনি? তাই নাকি?" ভ্যাবলা অবাক, "আরে ওটার জন্যই তো ভাষাটা বাঙলা হবে ঠিক করলাম।"
"মানে?" জ্যেঠু এবার যেন অবাক হতেও ভুলে যান।
"মানেটা সিম্পল," ভ্যাবলাও অবাক, "ইংরেজি বা হিন্দি ভাষায় সিরিয়াল করলে গানের জন্য তোমার চয়েস লিমিটেড। ইংরেজি সিরিয়ালে তো হিন্দি গান চলবে না, তেমনি হিন্দিতেও বাঙলা গান দিতে পারবে না। কিন্তু বাংলাতে তুমি পুরো তিনটেই পাচ্ছ।"
"বাঙলা সিরিয়ালে চলবে ইংলিশ গান?" জ্যেঠুর স্তম্ভিত মুখ দেখে ভ্যাবলা আশ্বস্ত করে।
"আরে ঘাবড়াচ্ছো কেন?" বোঝানোর চেষ্টা করে ভ্যাবলা, "ধরো সেই পিজ্জাটা এসে গেছে, সবাই টেবিলে বসে ভাত, মুড়িঘণ্ট, পিজ্জা, সব একসাথে খাচ্ছে, এমন সময়ে পরিবারের কর্তার ফোন এলো ফ্যাক্টরি থেকে। এবার ফোনে কথা বলতে বলতে ভাবো তুমি দেখছো অভিনেতা ঘামছেন আর একহাত বুকে বোলাচ্ছেন। ফোনের অপর প্রান্তে কি বলছে শোনা যাচ্ছে না। কোম্পানীর যদিও খুব টালমাটাল অবস্থা, সেটা দর্শক জানে। এমতাবস্থায় আমি Titanic সিনেমার গান চালিয়ে দিলাম।"
"Titanic?" জ্যেঠুও নিজের বুকে হাত বুলোতে শুরু করেন প্রায়।
"একদম! Titanic। বলো দেখি Titanic বলতে তোমাদের কি মনে হয়?"
"জাহাজডুবি!" জ্যেঠুর জবাব।
"নায়িকার হাত ছড়িয়ে উড়ে যাওয়ার ভঙ্গি!" পচা একসাথে বলে ওঠে।
"correct!" ভ্যাবলার চোখমুখ যেন লটারি পাওয়ার আনন্দে উদ্ভাসিত, "এই দেখো, তাহলেই কেমন বোঝা গেল কোম্পানী ডুবছে আর সেই খবর পেয়ে কর্তার প্রাণপাখি বুকের খাঁচা থেকে বেরিয়ে উড়ে যেতে চাইছে।"
"তুই অস্কার পাবি", জ্যেঠুর গলা ইমোশনে বুজে আসে।
"সঙ্গে নোবেল ফ্রী!" পচাও গলা মেলায়।
"আর কিছু জানতে চাও কি?" গর্বিত স্বরে জানতে চায় ভ্যাবলা।
"জানার তো আর বিশেষ কিছু বাকি রাখিসনি রে ভ্যাবলা, সিরিয়ালের নামটা ঠিক করলি কি?" জানতে চান ঝানুজ্যেঠু।
জ্যেঠুর গলায় আদরের ডাক, ভ্যাবোলটা যে নেই খেয়াল করে ভ্যাবলা মাথার পিছনটা একটু চুলকে বলে, "এই রে! কোনো নাম তো এখনো ঠিক করিনি জ্যেঠু!"
"তাহলে আমি দিচ্ছি," বলেন ঝানুজ্যেঠু, "নাম না বলে concept বলতে পারিস। তোর বানানো ঘোলটার নাম দিস সিরিয়াল কিলার!"

Tuesday, May 11, 2021

While the Light Lasts and Other Stories

It starts with a tale of despair that defines romance in The House of Dreams. Written in her early years, the signature style is so subtle that it might only be realized in hindsight. Surely not the best of her creations, it could really be her path to lesser fame had not a novelist friend came to her aid with encouraging directions. That it was required for the budding author was acknowledged by Christie when she paid her respect to Philpotts while already established in a literary career. It is followed by The Actress, a thrillingly fascinating narrative that is short but crisp. This drama is intensely psychological, revealing the inherent cowardice that is exploited to stage the apparently vicious trap. Thrills continues in The Edge, which befits the title in varied ways as the frustrated dame fights the desperate wife in a battle of nerves with a fatal climax that is deceptively tragic. Each piece has afterword which gives a little bit of perspective to the works. The following features Poirot in the mystery with title Christmas Adventure, which is though a reread, but the title was different while the charm similarly satiating. The Lonely God is romance weaved in mystery that blesses the same with the delightful Heavenly appeal. The twist in the tale was predictable yet satisfactorily welcome as the long lost artist meets the lost love at the feet of the Deity with apparently a dearth of worshipers but still standing supreme with the sacrifices that a God can only offer. Disappointment will be in store while reading Manx Gold but the afterword will be more than a satisfactory justification of its apparent vague treasure chase. Written for attracting tourists for the Isle of Man, the clues are strewn in the text for its readers to detect. Within a Wall is a black romance with a crooked sense of desire. While the silent lover seeks love in helping the needy, the calm companion longs the same in possesiveness. The touch of cunning returns with Poirot in unravelling The Mystery of the Baghdad Chest that contained a murdered body, hidden apparently in a room full of guests and their attendees. Being the original to 'The Mystery of the Spanish Chest', perspective played the vital pivot to identify the criminal while evidences supported the hypothesis. Guilt and comfort play a black tale in While the Light Lasts, where the apparent relief to the anxious heart paints a tragedy that lies hidden from the coarser eyes. It seemed to reflect a certain status conscious author giving vent to her ambitious nature camouflaged in a manner, which is both convenient and elegant.

Sunday, March 14, 2021

The Origin of Species

Establishing the thesis of natural selection as fundamental to the maturity of species, the author sketches the origin of our ancestral forms in such a detail as to make the subject interesting albeit a little want of illustrations. Critically studying such diverse samples, both in quantity and variety, their results are discussed not only from the perspective of the followers but also from that of the opposers as well. Logically analysing the range of findings, the justifications supporting the conjectures for the development of species have been established. Exceptions are pointed at and clarified within the scope of the theory and the shortcomings are hinted at for following up by the future analysts in the field. The depth of the study and the sheer size of the samples taken will keep the readers in awe of the patience and understanding of one of the chief architects of modern science, Darwin whose revolutionary ideas like struggle for existence, survival of the fittest, to name a few, seemed to be based not only on a handful of observations but a gigantic sample encompassing literally the earth in its diversified flora and fauna. Categorizing the various lifeforms that populated the earth for ages in classes, genres, species, the integration between them have been clearly explained. With my limited knowledge of biology, it seems everything except mutation has been covered, though its necessity is hinted, principally to decipher the origin of the living beings, essentially highlighting that the fundamental concept of gene might not have been known at that time. Emphasising on logical analysis based on geographically distributed samples, the book is recommended for matured readers. The long sentences used might be a bit difficult for many but the scientific terms used will not be so due to the glossary appended alongwith. The painstaking research will be surely appreciated as will be the standard of reasoning based on analysis without the tools and resources that advanced technologies had yet to implement. The tracing of our ancestral origin will not only be a wondrous revelation to many but will award a critical perspective of viewing living creatures in future.

Tuesday, February 02, 2021

Fermat's Last Theorem

Simon Singh's account of how the last theorem of Fermat was solved is truly a mathematical adventure. Starting with the famous yet often unspoken Pythagoras' proof, traversing the intricacies of Diophantine riddles and the Game Theory, the rigorousness of the dot conjecture, not to mention that of some apparently milder axioms, the cunningly composed paradoxes utilizing purest form of logic, the rationality of the irrationals, the powerful primes with their mysterious intervals, the variety of amazing abstractions that decorates the subject were  introduced suitably as the theorem was discussed whose apparent simple statement kept the mathematical community scratching for the proof for centuries. Complementing the beauty of mathematics, was the saga of the giants in the field, most prominent being the tragic genius Evariste Galois whose short life and notes documented during his even shorter mathematical career that lasted till the night before his death was one of the valuable threads for the proof. Then was the cornerstone conjecture of the mathematical pair of Taniyama and Shimura whose proof held the key for proving the elusive theorem, as stated by mathematician, Gerhard Frey, corroborated by Ken Ribet with a hint from Barry Mazur. The techniques pioneered by Kolyvagin, Flach, Iwasawa were utilized as Andrew Wiles improvised on the techniques to present the elegant proof for the most sought after theorem that baffled generations of mathematicians. The role of his former supervisor, John Coates, who introduced elliptical curves to him, that of Nick Katz, the only other mathematician who was taken into confidence by Wiles as he edged towards the proof during the secretive years and who actually failed to catch a gap in the logic during the time only to indicate the same, albeit with a bit of embarrassment, while refereeing the historic paper leading to yet another article by Wiles with his former student, Richard Taylor, another referee to the original and then a collaborator to its historic supplementary paper, the supporting ensemble to this classic drama also finds their deserving credits. Mention is made of the eccentric Paul Friedrich Wolfskehl and his chance encounter with the Fermat puzzle that not only averted his suicide but captivated him to such an extent as to announce a lumpsum reward for the person to solve it thus adding a material appeal with a solid timeline to the prestige that beckoned the chasers.

The book is draped with episodes of mathematical events but the underlying mathematical principles behind them are elaborated for the layman to admire the elegance of the various abstract forms. A theorem that sometimes threatened to be a wild goose chase, had to wait for centuries for a definitive proof. A 358 long years of perseverance by the mathematical community was prized with a voluminous proof that not only clarified the theorem but offered the probing of logical genes that constitute the subject. Andrew Wiles created history while solving the taunting theorem of Fermat but the chapters that he transcribed had described mathematics for its further refinement as can be assimilated by the limit of intelligence. The passionate dream of a child saw its culmination in the Annals of Mathematics as the masters of logic witnessed the composition of the master theorist. Simon Singh has beautifully pieced together the significant events in mathematical evolution, presenting it to the layman with a fervour which is both infectious and compelling.